বাংলা

ভূমিকম্পের কারণ এবং পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ গঠনের সম্পর্ক

ভূমিকম্প তার ভয়াবহ  ক্ষতি এবং ধ্বংস সাধনের জন্য সর্বসাধারণের কাছে সুপরিচিত ।
কিন্তু !!! ভূমিকম্প আসলে কি ?
সাধারণভাবে ভূমিকম্প বলতে বুঝায় মাটির(ভূত্বকের) আকস্মিক কম্পন, যা ভূত্বকের মাঝে সংঘটিত কোন আন্দোলনের ফলে  হয়ে থাকে।
প্রচলিত কিছু ধারনার মধ্যে একটি ধারনা হল, ভূমিকম্প কোন অভিশাপের কারণে হয়ে থাকে, যেহেতু ভূমিকম্পের কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। কিন্তু ভূমিকম্প সাধারণত পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ উপাদান কিংবা গঠনের আকস্মিক পরিবর্তন অথবা চলাচলের জন্য হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের কারণ সর্ম্পকে জানতে হলে আমদের প্রথমে পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ গঠন সর্ম্পকে জানতে হবে।
আমাদের এই  পৃথিবী প্রধানত তিনটি স্তরে বিভক্ত, প্রথম স্তরটি হল শিলামন্ডল (Crust), এর নিচে থাকে গুরুমন্ডল (Mantle), এর ঠিক নিচে থাকে কেন্দ্রমন্ডল (core)। কেন্দ্রমন্ডল আবার দুইটি অংশে বিভক্ত > বহিঃস্থ কেন্দ্রমন্ডল এবং অন্তঃস্থ কেন্দ্রমন্ডল। বলে রাখা ভাল পৃথিবীর ভূত্বক থেকে যতই গভীরে যাওয়া যায় চাপ এবং তাপমাত্রা বাড়তে থাকে , যার ফলে পৃথিবীর অভ্যন্তরের অধিকাংশ পদার্থ গলিত অবস্থায় থাকে।
কিন্তু এর সাথে ভূমিকম্পের সর্ম্পক কি??!!
তা বুঝতে হলে জানতে হবে “প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব
এই তত্ত্বের মূল ধারনা হল, ভূপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর শিলামন্ডল কতগুলো অংশে বা খণ্ডে  বিভক্ত । এগুলোকে  প্লেট বলা হয় । এই প্লেটগুলো গুরুমন্ডলের আংশিক তরল অংশের উপর ভাসমান অবস্থায় আছে। এই প্লেটগুলি প্রতিবছর কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত কোন একদিকে সরে যেতে পারে। পাশাপাশি অবস্থিত প্লেট গুলো কখনো একটি থেকে আরেকটি দূরে সরে যায়, আবার কখনো কখনো একে অন্যের দিকে এগিয়ে আসে। কখনও কখনও প্লেটগুলো বছরে কয়েক মিলিমিটার উপরে উঠে বা নিচে নেমে যেতে পারে। একটি প্লেটের সাথে আরেকটি প্লেট যেখানে সংঘর্ষ বাধায় সেখানেই বেশি ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির উদগীরণের ঘটনা ঘটে থাকে।
ধারনা করা হয় প্লেটগুলি মধ্যবর্তী সংঘর্ষের ফলে সেখানে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়। তাপে ভূত্বকের কঠিন শিলা গলে যায়। এ গলিত পদার্থ  অত্যধিক চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ফাটল অথবা অপেক্ষাকৃত নরম শিলা ভেদ করে বেরিয়ে আসে কিংবা বেরিয়া আসতে চায়। এই গলিত পদার্থ কে ম্যাগমা আর যখন তা ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে তখন তাকে লাভা বলে। ম্যাগমা নির্গমনের সময় প্রচুর পরিমাণ শক্তি ও নির্গত হয় । যার ফলে ভূপৃষ্ঠ প্রকম্পিত হয় যাকে আমরা ভূমিকম্প বলি।

লিখেছেন,
তনিম শাওন,
   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *