জীববিজ্ঞান

তুমি ও তোমার অনাক্রম্যতা

যদি তোমার খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের জীবন বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে পরিচিতি থাকে তুমি খুব সহজে অনুধাবন করতে পারবে যে খালি চোখে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার তুলনায় চোখে দেখা যায় না এমন জীবের সংখ্যা বহুগুন বেশী, এবং এই অদৃশ্য মাইক্রো অর্গানিজম এর জগৎ ও তেমনি বিচিত্র এবং রহস্যময় এদের সংখ্যাও অসীম। বর্তমান বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ এর প্রকোপে এই ক্ষুদ্র জীব সম্পর্কে জনসচেতনতা ও গবেষণা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করবে তাতে সন্দেহ নেই তার সাথে সাথে আমাদের আরেকটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আলোকপাত করা উচিত তা হলো আমাদের শরীরে অভ্যন্তরীণ সৈনিকদের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত এইসব ক্ষতিকারক অনুজীবদের সাথে ক্রমাগত লড়াইয়ে ব্যস্ত সহজ ভাষায় যাকে আমরা বলি ইমিউনিটি বা অনাক্রমতা।

এরসাথে আমাদের ত্বক, মুখের লালা, যকৃতের মধ্যেকার এসিড ও চোখের জল, এগুলোও অনাক্রম্যতার অন্যান্য উপাদান।

এই অনাক্রম্যতাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় একটি হলো সহজাত অনাক্রম্যতা (Innate immunity) আর অপরটি হল অর্জিত (Acquired Immunity) অনাক্রম্যতা আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু সহজাত ক্ষমতা কেন্দ্রিক এবং অন্যক্রমতা আরও কিছু উপ বিভাগে বিভক্ত তার মধ্যে কোষীয় প্রতিবন্ধকতা (Cellular Barriers) এবং অন্তর্গত শ্বেত কণিকা এর এক প্রকার হলো লিম্ফোসাইট বা টি-সেল। তো আমরা এই টি-সেল নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে থাইমাস গ্রন্থি অনাক্রম্যতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই থাইমাস গ্রন্থি আমাদের ফুসফুসের মধ্যদ্বয়ের স্টারনামের পেছনে অবস্থান করে এবং এই গ্রন্থি পেপটাইড জাতীয় হরমোন ক্ষরণ করে যা লিম্ফোসাইটের বিভক্তকরণে ও দেহে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। প্রকারভেদে এই টি-সেল লক্ষাধিক রকমের হতে পারে। এবং এদের কিছু চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হলো এদের পৃষ্ঠতলে অবস্থিত বিশেষ রিসেপ্টরের সাহায্যে এরা প্যাথোজেন (রোগ সৃষ্টিকারী অনুজীব )খুব সহজে শনাক্ত করতে পটু এমনকি এরা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিজেনকেও শনাক্ত করে এবং প্রত্যেক প্রকার অ্যান্টিজেনের জন্য পৃথক পৃথক রিসেপ্টর থাকে।

আচ্ছা এবার জেনে নেওয়া যাক এই টি-সেল কোথা থেকে উৎপন্ন হয় বা এর উৎপত্তিস্থল  কোথায়? উত্তর হলো….. বোন ম্যারো (Bone Marrow) এর স্টেম সেল থেকে উৎপন্ন হয়, এই সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে আমাদের ভ্রূণ জগতকে বুঝতে হবে। এই ভ্রূণের একটি বিশেষ পর্যায় ব্লাস্টোসিস্ট এর বাইরের প্রান্তে এক প্রকার কোষীয় স্তর থাকে যার মধ্যে থাকে স্টেমসেল স্টেম সেলের নিজস্ব ক্ষমতা আছে দেহের সমস্ত অঙ্গ কলা তৈরি করতে পারা, বোনম্যারো থেকে উৎপন্ন টি-সেল অপরিণত অবস্থায় থাকে তারা রক্তের মাধ্যমে থাইমাসের উদ্দেশ্যে গমন করে এবং থাইমাস ওদের পরিণত ও সক্রিয় করতে সাহায্য করে। টি-সেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা দরকার। প্রথমে যার নাম আসে তা হলো কিলার টি-সেল (Killer T-cell) যারা সোজাসুজি প্যাথোজেনকে আক্রমণ করে এবং বিপাকীয় উৎসেচক ও রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে প্যাথোজেনকে ধ্বংস করে। অপর প্রকার হল হেল্পার টি-সেল (Helper T-cell), এরা বাইরে থেকে আগত প্যাথোজেনদের মোকাবিলার জন্য আ্যন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে তার সাথে কিলার টি-সেল গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে মজার হলো মেমোরি টি-সেল (Memory T-cell)। এরা প্রাথমিকভাবে প্যাথোজেন ধ্বংসে অল্প ভূমিকা রাখলেও এরা এইসব শত্রুদের (Pathogen) ভাল করে চিনে রাখে আর দ্বিতীয়বার যখন তারা শরীরে  প্রবেশ করে তখন এরা প্রতিশোধ নেয়, তাই কিছু রোগ প্রথমবার হওয়ার পর দ্বিতীয়বার সচরাচর হয়না, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল পক্স (Small Pox) এটা সম্ভব একমাত্র মেমোরি টি-সেলের জন্য । এছাড়াও আমাদের দেহে বহু রকমের টি-সেল আছে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও টি-সেলের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ শনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং তা ধ্বংস করে এবং ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে ইমিউনোথেরাপি ও হয়, যাকে আমরা CAR-T নামে জানি, তবে এই থেরাপির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেমন এটি অত্যাধিক ব্যয়সাপেক্ষ এবং সর্বপ্রকার ক্যান্সার টিউমার নিধনে এই পদ্ধতি অকার্যকর। ভবিষ্যতে আরও গবেষণার প্রয়োজন।

Reference:

1. Biology text books

2. Hashem Al-Ghaili

© Md Zahid Ansari

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *