“অ্যালাম” একধরনের রাসায়নিক যৌগ যেটি সাধারণত অ্যালুমিনিয়ামের আর্দ্র দ্বিত্ব সালফেট লবনকে (hydrated double sulfate salt of aluminium) বুঝায়।

আরো ভেঙ্গে বললে, দ্বিত্ব মানে দুই, আর্দ্র মানে কেলাস পানি, আর অ্যালুমিনিয়ামের আর্দ্র দ্বিত্ব সালফেট লবন বলতে বোঝায় অ্যালুমিনিয়াম সালফেট লবন এবং সাথে অন্য একটি সালফেট লবন (মানে মোট দুইরকমের সালফেট লবন) এবং কেলাস পানি!

অ্যালামের সাধারণ সংকেত (general formula) হচ্ছে XAl(SO4)2·12H2O, এখানে X হচ্ছে একটি একযোজী(monovalent) ধাতব আয়ন(cation)/ধনাত্মক যৌগমূলক(positive radical), উদাহরণস্বরূপ পটাশিয়াম আয়ন(K+)/অ্যামোনিয়াম আয়ন(NH4+)।

তবে সচারচর অ্যালাম বলতে পটাশিয়াম অ্যালাম/পটাশ অ্যালামকে বোঝানো হয়, যেটির সংকেত হচ্ছে KAl(SO4)2·12H2O। এটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখতে হবে…!

চিত্রঃ পটাশ অ্যালাম/ফিটকিরি

এদের নামকরণের বেলায়, যৌগটিতে উপস্থিত অ্যালুমিনিয়াম সালফেট হতে “অ্যালাম” নামটি শেষে বসে আর অন্য একটি সালফেট লবন হতে সেটির ধনাত্মক মূলকের নাম পূর্বে বসে! কথাটা বুঝতে এখন একটু সমস্যা হতে পারে, তবে পড়তে থাকলে সামনে বিষয়টার খোলাসা হবে!

এখন তোমরা বলতে পারো যে, আমরা ত বইয়ে পটাশ অ্যালামের সংকেত পড়েছি- K2SO4.Al2(SO4)3.24H2O। কথাটা সত্যি! এক কাজ করো KAl(SO4)2·12H2O এই সংকেতটাকে 2 দিয়ে গুন করে দেখ…

2 KAl(SO4)2·12H2O K2SO4.Al2(SO4)3.24H2O, বিশ্বাস না হলে উভয় পাশে পটাশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সালফেট এবং পানির সংখ্যা হিসেব করে দেখতে পারো!

আচ্ছা এই পটাশ অ্যালামের প্রচলিত নাম কিন্তু ফিটকিরি!

তাহলে এখান থেকে ও তোমরা অ্যালামদের আরেকটি সাধারণ সংকেত দাঁড় করাতে পারো, সেটি হচ্ছে- X2SO4.Al2(SO4)3.24H2O, যেখানে X এর পরিচয় আগের মতই!

তাহলে আরও দুটি অ্যালাম দেখে নিই!

NaAl(SO4)2·12H2O/Na2SO4.Al2(SO4)3.24H2O সোডিয়াম অ্যালাম/সোডা অ্যালাম,

(NH4)Al(SO4)2·12H2O/(NH4)2SO4.Al2(SO4)3.24H2O অ্যামোনিয়াম অ্যালাম

আচ্ছা এখানে অ্যালামের সংকেতে যদি অ্যালুমিনিয়াম অন্য কোনো ত্রিযোজী(trivalent) ধাতব মৌল যেমনঃ ক্রোমিয়াম(Cr) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, তখন সেটির নাম কি হবে?

উদাহরণস্বরূপঃ

KCr(SO4)2·12H2O/K2SO4.Cr2(SO4)3.24H2O ক্রোমিয়াম অ্যালাম/ ক্রোম অ্যালাম

এখন হয়ত তোমরা তাজ্জব হয়ে গেলে…!

অ্যালুমিনিয়াম নেই, তবুও অ্যালাম! আর পটাশিয়াম থাকার পরেও পটাশ নামটা অনুপস্থিত!

এইরকম নামকরণের কারণ, অ্যালাম মানেই আর্দ্র পটাশিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সালফেট/পটাশিয়াম অ্যালাম/পটাশ অ্যালাম(KAl(SO4)2·12H2O/K2SO4.Al2(SO4)3.24H2O), যেটি বারবার জোর দিয়ে বলা হচ্ছে মনে রাখার জন্য!

তার মানে পটাশ নামটা যৌগের নামে উল্লেখ না থাকলে ও বুঝতে হবে সেখানে পটাশিয়াম সালফেট থাকবে! আর যেহেতু অ্যালুমিনিয়াম সালফেটের অ্যালুমিনিয়ামকে প্রতিস্থাপিত করে ক্রোমিয়াম বসেছে, তাই পটাশ নামটির পরিবর্তে ক্রোমিয়াম… আরও সংক্ষেপে ক্রোম বসবে!

এখানে অ্যালুমিনিয়ামের অনুপস্থিতির কারণে অ্যালাম নামটি বাদ যাবে না! কারণ, ক্রোম অ্যালামের(আর্দ্র পটাশিয়াম ক্রোমিয়াম সালফেট) রাসায়নিক গঠন, বিক্রিয়া, বন্ধন প্রকৃতি পটাশ অ্যালামের মতই অনুরূপ!

এটি শুধু ক্রোম অ্যালাম নয়, বরং অন্য সব প্রতিস্থাপিত অ্যালামের ক্ষেত্রে ও এই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে!

তাহলে এখন অ্যালামদের অন্য আরেকটি সাধারন সংকেত দিয়ে প্রকাশ করা যায়! সেটি হচ্ছে- X2SO4.Y2(SO4)3.24H2O, যেখানে X হচ্ছে একযোজী ধাতব আয়ন/ধনাত্মক যৌগমূলক আর Y হচ্ছে ত্রিযোজী ধাতব আয়ন!

আচ্ছা এখন অ্যালামদের মতই কিছু ছদ্ম অ্যালাম( pseudo alum) আছে! “ছদ্ম/pseudo” শব্দটির অর্থ নকল! তার মানে ছদ্ম অ্যালাম আসলে অ্যালাম নয়!

এদের সাধারণ সংকেত হচ্ছে– XSO4·Y2(SO4)3·22H2O, যেখানে X হচ্ছে দ্বি-যোজী ধাতব আয়ন/ধনাত্মক যৌগমূলক আর Y হচ্ছে ত্রিযোজী ধাতব আয়ন!

উদাহরণস্বরূপ, FeSO4.Al2(SO4)3·22H2O, MgSO4.Al2(SO4)3·22H2O

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *