রসায়ন

Group IVA & Group VA এর হাইড্রাইড-Hydrides

রসায়ন পড়তে তোমাদের বিভিন্ন কারণেই কঠিন লাগে। আমাদের ও লাগতো, তবে এই ব্যাপারটাকে কিছু কৌশলে আয়ত্তে আনা যায়। তার মধ্যে প্রথম কৌশল হলো পর্যায় সারণী সম্পর্কে ধারণা থাকা। এখন পর্যন্ত ১১৮ টা মৌল বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন/ গবেষণাগারে সংশ্লেষণ করতে পেরেছেন। কোন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ এর পক্ষে কি এই ১১৮ টা মৌলের প্রত্যেকের ধর্ম, বৈশিষ্ট্য, বিক্রিয়া, তাদের সৃষ্ট বিশেষ যৌগ ইত্যাদি মনে রাখা বা কাজে লাগানো সম্ভব? অবশ্যই না!!! এর জন্য বিজ্ঞানীরা বহু কষ্ট করে আমাদের জন্য ব্যাপারটা অনেক সহজ করে নিয়ে এসেছেন। যেসব মৌলদের ধর্ম বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি একই রকম তাদেরকে একই সাথে একই কলামে বসিয়ে সাজিয়েছেন। (মূলত সাজিয়েছেন মৌলগুলোর পর্যায় সংখ্যার ক্রমানুসারে। কিন্তু এমনভাবে সাজিয়েছেন যেন একটি মৌলের নিচে আরেকটি মৌল এমনভাবে বসে যে, তাদের ধর্মের মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যায়।)
রসায়ন যদি তোমার কাছে সহজ করতে হয়, তোমাকে যে কাজটা করতে হবে –
১) (১-৩০) ক্রমাঙ্ক পর্যন্ত মৌলের নাম মুখস্ত রাখবে।
২)গ্রুপ ভিত্তিকভাবে মৌলের নাম শুধু মুখস্থ  রাখবে-
IA,IIA → সব ,
IIIA → (B-In)পর্যন্ত ,
IVA → (C-Pb)পর্যন্ত ,
VA → (N-Bi)পর্যন্ত ,
VIA → (O-Po)পর্যন্ত,
VIIA → (F-At)পর্যন্ত ,
০ গ্রুপ → (He-Rn)পর্যন্ত
সাবধান!!! আমরা কিন্তু তোমাকে শুধু নাম মুখস্থ  করতে বলেছি!! অন্য কিছু দরকার নেই। নাম মুখস্থ  করার জন্য কয়েকবার মুখে বলা আর হাতে লেখা হলেই যথেষ্ট। তাতেও কাজ না হলে, অনেকেই অনেক কালজয়ী কবিতা বানিয়ে রেখেছেন, সেগুলো দেখে নিতে পারো।
নাম মুখস্ত করে কি লাভ হলো?! ধরো, তোমার পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে, ইন্ডিয়াম অক্সাইড এর সংকেত কোনটি? তুমি শুধু মনে করার চেষ্টা করো যে, In কোন গ্রুপের মৌল? আশা করি মনে পড়েছে যে,এটা B,Al এর  সাথে গ্রুপ IIIA তে আছে। ব্যাস! এইতো হয়ে গেল!! আ্যলুমিনিয়াম অক্সাইড এর সংকেত যদি  হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ইন্ডিয়াম অক্সাইড এর হবে
এরকম আরো কত শত উদাহরণ দেখা যায়!!
তোমাদেরকে আমাদের একটা অভিজ্ঞতা বলি। ২০০৭ সালে আমাদের BUET ভর্তি পরীক্ষার রসায়ন লিখিত পরীক্ষার খাতা খুলেই প্রথম যে প্রশ্নটা পাই তা হলো…
#0.01M বেরিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণের pH কত?
উত্তরঃ এটা যেহেতু হাইড্রোক্সাইডের দ্রবণ, তাহলে আগে আমাদের pH নির্ণয় করতে হবে।
pOH= -log[OH-] = -log(0.01) =2
pH = 14 – pOH = 14-2=12
কিন্তু, অংকের সমাধানটা ভুলে ভরা। কেন?!
ইতোমধ্যে কয়েকজন হয়তো ধরে ফেলেছো, যারা পর্যায়সারণী সম্পর্কে ধারণা রাখো। Ba এর অবস্থান Ca এর সাথে একই গ্রুপ IIIA তে। সুতরাং,ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড যদি Ca(OH হয় তাহলে বেরিলিয়াম হাইড্রোক্সাইড –এ  Ba(OH হবার কথা। সুতরাং,
=  +
শুরুতে, 0.01mol/L       0               0
(0.01-0.01) mol/L   0.01 mol/L  (2×0.01) mol/L
সুতরাং, pOH = -log[OH-] = -log(2×0.01) = 1.6989
তাহলে, pH= 14- pOH = 12.301
তাহলে বোঝো! অঙ্কের মাঝে trick টা কই ছিল…….।
আশা করি ধরতে পেরেছো। তোমার নিশ্চয়ই ১১৮টি মৌলের আলাদা করে যোজনী মুখস্থ/মনে রাখা সম্ভব নয়! সুতরাং একটু কৌশলী হতে হবে তোমাকে। গ্রুপ ভিত্তিক ভাবে মৌলের নাম মুখস্থ করে রাখলে বিশ্বাস করো ,  রসায়ন এর পড়ার চাপ ১০ ভাগ থেকে একবারে ১ ভাগে নেমে আসবে! গ্রুপ ভিত্তিকভাবে সকল মৌলের সব বৈশিষ্ট্য যে একেবারে খাপে খাপে মিলে যাবে,  আমরা কিন্তু তা বলছি না! তবে তুমি ৭০-৯৫ ভাগ মিল পাবে। আবার বেশ কিছু ব্যতিক্রম ও পাবে। রসায়নের ব্যাপারে একটা কথা প্রচলিত আছে, “ রসায়নে নিয়মের চেয়ে অনিয়ম/ব্যতিক্রম ই বেশি” কথাটি পুরোপুরি সত্য না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি। তবে এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হবার কিছু নেই। এই বৈচিত্র্য আছে বলেই পৃথিবীতে এত সুন্দর এত ব্যতিক্রম তথা বৈচিত্র্য আছে, যার সবকিছু আমরা এখনো জানিনা। সুতরাং, সেগুলো আবিষ্কার করে তোমাদের “বিজ্ঞানী” খেতাব লুফে নেয়ার সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য চালু আছে। আর দেরি না করে তোমার “বিজ্ঞানী” খেতাবটি আজই সংগ্রহ করো!
কিছু মজার বিষয়
গ্রুপ IVA বা 14 নং গ্রুপের মৌলগুলা- C, Si, Ge(জার্মেনিয়াম), Sn(টিন, ল্যাটিন- স্ট্যানাম), Pb(লেড, ল্যাটিন-প্লাম্বাম) এদের সবার কমন বা সাধারণ যোজনী হলো 4, সুতরাং এদের সবার সাধারণ হাইড্রাইডের সংকেতগুলো হলো- CH4 , SiH4 , GeH4, SnH4 , PbH4 এদের মধ্যে প্রথমটির নাম তোমরা সবাই জানো, কিন্তু বাকীগুলোর? বাকীগুলোর নাম খেয়াল করো- IVA তে ,
C মিথেন (methane)
Si সিলেন (silane) [সিলিকন নাম হতে এসেছে]
Ge  জার্মেন (germane),
Sn স্ট্যানেন (stanane),
Pb প্লাম্বেন (plumbane) ।
হঠাত করে কোন পরীক্ষায় যদি দেয় এর নাম কি? আর প্রশ্নের উত্তরে অপশনে ক বা খ নং অপশনে থাকে টিন হাইড্রাইড বা টিন টেট্রা হাইড্রাইড, আমি নিশ্চিত তোমরা ৯৮ ভাগ ই একটা দাগিয়ে দিয়ে আসবে। কিন্তু আসলে কি সঠিক উত্তর তাই? আর এটা আজগুবি কোন প্রশ্নের কথা বলছিনা,। বিশ্বাস না হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নব্যাংক ঘেঁটে দেখো এই ধরণের প্রশ্ন আসে কিনা।
একইভাবে গ্রুপ VA এর হাইড্রাইড গুলোও খেয়াল করো-
VA এর ক্ষেত্রে ,
N→  (অ্যামোনিয়া) ,
P→  (ফসফিন/ফসফাইন) (বিষাক্ত গ্যাস যা ইঁদুর মারার ওষধে পাওয়া যায়) ,
As → (আর্সাইন/অ্যার্সিন্‌) ,
Sb →  (স্টিরাইন/স্টিরিন) ,
Bi → (বিসমাইন/ বিসমিন) ।
এখানের সব নামগুলো মূলত ফসফাইন/ফসফিন এর নাম থেকে  অনুকরণ করা হয়েছে। তাহলে  নামটা একটু বেখাপ্পা লাগছে, তাইতো?
দুশ্চিন্তার কিছু নেই! তোমাদের জন্যে এটাতেও অন্য আরেকটা নাম আছে যা অন্য হাইড্রাইডগুলোর নামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ।  এর অপর নাম হচ্ছে অ্যাজেন (Azane) এবার তো নামগুলো মিলছে না?
খেয়াল করে দেখো,
(অ্যাজেন),
(ফসফিন),
, (আর্সিন)
হঠাৎ করে এর নাম (অ্যাজেন) হলো কেনো জানো?? নাইট্রোজেন আবিষ্কার করেন, ড্যানিয়েল রাদারফোর্ড। ইনি কিন্তু আর্নেস্ট রাদারফোর্ড নন, যিনি কিনা solar system atomic model. আবিষ্কার করেছিলেন আলফা কণার বিচ্ছুরণের পরীক্ষার মাধ্যমে! তো ড্যানিয়েল রাদারফোর্ড এর সমসাময়িকভাবে কার্ল ওয়েলহেসহেনরী ক্যাভেন্ডিস। তারপরেও  নাইট্রোজেন আবিষ্কারের কৃতিত্ব ড্যানিয়েল রাদারফোর্ডকেই দেয়া হয়, কারন তার গবেষনা পত্রই সবার আগে প্রকাশিত হয়। তখনকার দুনিয়ায় বেশ প্রতাপওয়ালা একজন বিজ্ঞানী ছিলেন অ্যান্টোনি ল্যাভেয়োজি (যার নামের উচ্চারণ আমরা “ল্যাভেয়সিয়ে” করে থাকি) তাকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়। রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে তার অসমান্য অবদানের জন্যে। আমরা যাকে পরিমাপের SI পদ্ধতি বলে থাকি, সেটার গোড়াপত্তন সালফারকে মৌল হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানে, দহন ক্রিয়াতে অক্সিজেনের ভূমিকার আবিষ্কারসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে তিনি অবদান রেখেছেন। তার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারো। তো নাইট্রোজেন এর আবিষ্কারের পরেই এই প্রভাবশালী বিজ্ঞানী ল্যাভেয়োজি এর নামকরণ করেন (Azone) যা গ্রীক ভাষা হতে উদ্বুদ্ধ ।এর অর্থ নির্জীব(no life). এই নামে নামকরণের কারণ হলো নাইট্রোজেনের বিশেষ নিষ্ক্রিয় ধর্ম। পর্যায় সরনীর গ্রুপে অবস্থিত নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর পর মৌলটিই সর্বাপেক্ষা নিষ্ক্রিয়। এজন্য পরীক্ষাগারে অনেক বিক্রিয়ায় নিষ্ক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বা ওয়েল্ডিং জাতীয় কাজে, পরিবেশ হতে আলাদা বিচ্ছিন্ন অবস্থা সৃষ্টির জন্য অনেকক্ষেত্রে গ্যাস ব্যবহার করা হতো।  Azote এর ব্যবহার তোমরা আগেও মনের অজান্তে অনেকবার করেছো।  দেখতে চাও??
–> হাইড্রাজোয়িক/Hydrazoic acid ( উচ্চারণটা হাইড্রোজোয়িক না। Hydw+Azoic=Hydrazoic)
বা  > হাইড্রাজিন (Hydw+Azine=Hydrazine)
R-N=N-R’ (অ্যাজো যৌগ) > এগুলা সাধারণত রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(অ্যাজো বেনজিন) > এগুলা সাধারণত রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আচ্ছা এতক্ষনে হাইড্রাইডদের নামকরণ দিয়ে পর্যায় সারণীর গুরত্ব কোথায় বুঝানোর চেষ্টা করলাম, তোমরা কি আদৌ জানো যে, হাইড্রাইড কাদের বলে?? এরকম নাম আরো শুনেছো।
হাইড্রাইড, অক্সাইড,ক্লোরাইড, নাইট্রাইড,সালফাইড  ইত্যাদি। আসলে এরা কতগুলো Bionary বা দ্বিপদী যৌগ। দ্বিপদী যৌগকে আরো সহজে বুঝাতে গেলে বলতে হবে, দ্বিমৌল যৌগ অর্থাৎ এমন কোন যৌগ যা গঠিত হয় দুটি ভিন্ন মৌলের পরমানু দিয়ে। যেমন ধরো,
Cl (এর ক্লোরাইড) ,
O ( এর অক্সাইড) ,
NaH (এর হাইড্রাইড),
S ( এর সালফাইড)
ইত্যাদি।
এগুলো সবই দ্বিপদী বা দ্বিমৌল যৌগের উদাহরণ। ত্রিমৌল যৌগ বা ত্রিপদী যৌগের উদাহরণ হতে পারে-
NaCl (Na পারক্লোরেট),
(Na সালফেট),
( Na কার্বনেট) ,
(সালফিউরিক এসিড, এসিড এর রাজা, oil of vitriol)।
তাহলে, Ca এর হাইড্রাইড –  Ca এর সাথে H এর দ্বিমৌলযৌগ (),
Be এর হাইড্রাইড – Be এর সাথে H এর দ্বিমৌল যৌগ (),
As এর হাইড্রাইড – As এর সাথে H এর দ্বিমৌলযৌগ () ইত্যাদি।
তবে, H এর সাথে দ্বিপদীযৌগ গঠন করলেই যে তা হাইড্রাইড বলা যাবে বা হাইড্রাইড বলে ভাবা ঠিক হবে, ব্যাপারটা ঠিক সেরকম ও না। মূলত H- আয়নকে বলা হয় হাইড্রাইড। অপরপক্ষে, H+ কে হাইড্রোজেন আয়ন বলা হয়। সুতরাং, যেসব যৌগে H আছে এবং H- আকারে আছে তাদেরকে হাইড্রাইড বলা যেতে পারে  এবং সেক্ষেত্রে সেটি দ্বিমৌলযৌগ নাও হতে পারে। যেমন ধরো-
NaH- Na এর হাইড্রাইড,
NaB – সোডিয়াম বোরো হাইড্রাইড ( ত্রিপদী হাইড্রাইড যৌগ),
LiAl – লিথিয়াম আলুমিনিয়াম হাইড্রাইড
Side note

 #টুকরো জ্ঞানঃ যেসব অ্যানায়ন এর গঠনে oxyzen থাকে তাদের নামের শেষে “ট” থাকবে। আর যদি oxyzen না থাকে তাহলে “ড” থাকবে।
→ Na সালফেট ,
→ Na সালফাইট
→Na সালফাইড,
NaCl → Na পারক্লোরেট,
NaCl →Na ক্লোরেট,
NaCl →Na ক্লোরাইট ,
NaClO. →Na হাইপো ক্লোরাইট
Ca(OCl)Cl→ Ca ক্লোরো হাইপো কেলুজাইট ,
Ca(N Ca নাইট্রেট,
Ca(N →Ca লাইট্রাইট,
. →Ca নাইট্রাইড ইত্যাদি।
H এর সাথে যেকোন মৌলের দ্বিপদী যৌগকেই হাইড্রাইড বলে। কিন্তু এটা বলা ঠিক না। কারণ, H- আয়ন যেখানে যেখানে আছে, সেসব যৌগকেই শুধু হাইড্রাইড বলা যায়। কিন্তু আমরা H এর সকল দ্বিপদী যৌগকেই উচিত না হলেও হাইড্রাইড নামে ডাকবো।

IIIA IVA VA VIA VIIA
Borane C অ্যালকেন,
অ্যালকিন্‌অ্যালকাইন
O= পানি (Oxidane)
 Alumane Silane S=সালফেন    (Sulfane)
Gallane   Se =সিলেন (Sellane)
Indigane  Stannane Te=টিলেন (Tellane)
Thallane = প্লাম্বেন
Plumbane
Po= পোলেন (Pollane)
 

এখন বলোতো, উপরের কোনগুলো  হাইড্রাইড আর কোনগুলো হাইড্রোজেন যৌগ??

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *