
ল
লজিক গেট মূলত কি?
উত্তরঃ লজিক গেট হচ্ছে এক ধরণের ইলেকট্রনিক সার্কিট। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে যখন বুলিয়ান অ্যালজেবরার ব্যবহারিক প্রয়োগ করা হয় তখন তাকে বলে লজিক গেট।
লজিক গেটসমূহ লজিক হাই ‘1’ এবং লজিক লো ‘0’ এই দুটি বাইনারী লজিক নিয়ে কাজ করে।
ইতোমধ্যে তোমাদের মাথায় প্রশ্ন এসে গেছে “বুলিয়ান অ্যালজেবরা” কি ?
আমরা জানি কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস শুধু ০ এবং ১ বোঝে এবং এই ০ এবং ১ এর মাধ্যমেই এর সকল যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে। ১ দ্বারা বিদ্যুতের উপস্থিতি এবং ০ দ্বারা বিদ্যুতের আনুপস্থিতি বুঝায় । ১৮৫৪ সালে ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত গণিতবিদ জর্জ বুলি গনিত এবং যুক্তির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেন। যা প্রমানের জন্য তিনি বিভিন্ন গেট ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তার “ ম্যথম্যটিকস অব লজিক” নামে একটি গ্রন্থে গনিত এবং যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এক ধরণের অ্যালজেবরা উপস্থাপন করেন। যা সাধারন অ্যালজেবরা থেকে অনেক বেশী সহজ। তার নামানুসারে এই অ্যালজেবরাকে বলা হয় বুলিয়ান অ্যালজেবরা।
Truth Table কি?
কোন লজিক সার্কিটের ইনপুট এবং আউটপুটের মধ্যকার সম্পর্ক এবং লজিক্যাল অবস্থা যে টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় তাকে Truth Table বা সত্যক সারণী বলা হয়।
লজিক গেটের প্রকারভেদঃ
লজিক গেট মূলত দুই প্রকার।
১। মৌলিক গেট
২। যৌগিক গেট।
মৌলিক গেটঃ যে লজিক গেট একক এবং যাকে বিশ্লেষণ করলে অন্য কোন গেট পাওয়া যায় না তাকে মৌলিক গেট বলা হয়। উল্লেখ্য যে, মৌলিক গেটসমূহ ব্যবহার করে অন্য সকল যৌগিক গেটসমূহ তৈরী করা সম্ভব। মৌলিক গেট তিনটি। যেমনঃ
১. অর গেট (OR Gate): যৌক্তিক যোগের জন্য।
২. অ্যান্ড গেট (AND Gate): যৌক্তিক গুণের জন্য।
৩. নট গেট বা ইনভার্টার (NOT Gate): যৌক্তিক পূরকের জন্য।
যৌগিক গেটঃ এ গেইটগুলো এক বা একাধিক মৌলিক গেটের সমন্বয়ে তৈরি হয়।এগুলো হলোঃ
১. নর গেট (NOR Gate): OR গেট ও NOT গেটের সমন্বয়ে তৈরি।
২. ন্যান্ড গেট (NAND Gate): AND গেটে ও NOT গেটের সমন্বয়ে তৈরি।
৩. এক্স-অর গে্ট (X-OR Gate): অর, অ্যান্ড কিংবা নট গেট দিয়ে এ গেট তৈরি করা যায়।
৪. এক্স-নর গেট (X- NOR Gate): এক্স-অর গেট সাথে NOT গেট মিলিয়ে তৈরি হয়।
অর গেটঃ অর গেটের ক্ষেত্রেও ইনপুট দুই বা তার অধিক থাকলেও আউটপুট একটি থাকবে। দুটি ইনপুট যদি A এবং B হয় এবং এদের আউটপুট যদি Y হয় তবে A এবং B উভয়ের মান যখন ০ হবে কেবল তখনি আমরা আউটপুট Y এর মান ০ পাবো। অন্য সব ক্ষেত্রে Y এর মান ১ হবে। কারন অর গেট কাজ করে A+B=Y এই সূত্র মেনে। এই ক্ষেত্রে A অথবা B এর যে কোন একটির মান ১ হলে Y এর মান ১ হবে। চিত্রে তা দেখানো হল –
অ্যান্ড গেটঃ এই গেটে ইনপুট দুই বা তার অধিক থাকতে পারে কিন্তু আউটপুট সবসময়য় একটি হবে। দুটি ইনপুট যদি A এবং B হয় এবং এদের আউটপুট যদি Y হয় তবে A এবং B উভয়ের মান যখন ১ হবে কেবল তখনি আমরা আউটপুট Y এর মান ১ পাবো। অন্য সব ক্ষেত্রে Y এর মান ০ পাবো। কারন অ্যান্ড গেট কাজ করে AB=Y এই সুত্র মেনে। এই ক্ষেত্রে A অথবা B এর যে কোন একটির মান শূন্য হলে Y এর মান শূন্য হবে। চিত্রে তা দেখানো হল।
নট গেটঃ নট গেটের ক্ষেত্রে একটি ইনপুট এবং একটি আউটপুট থাকবে। একটি ইনপুট যদি x হয় এবং এর আউটপুট যদি z হয় তবে x এর মান যখন ০ হবে তখন আউটপুট z এর মান ১ হবে। অর্থাৎ এর যেকোনো একটি মানের জন্য আমরা এর আউটপুট ইনপুটের মানের ইনভার্টেড মান পাবো। অর্থাৎ আউটপুট হবে ইনপুটের ইনভার্টেড মানের সমান। কারন নট গেট কাজ করে x̅=z এই সুত্র মেনে। চিত্রে তা দেখানো হল।
নর গেটঃ
অর গেটের আউটপুট এর সাথে একটি নট গেট সংযুক্ত করলে একটি নর গেট পাওয়া যায়। এর আউটপুট ইনপুটসমূহের ‘লজিক্যাল নর’ অপারেশনের সমান। এর প্রতীক এবং ট্রুথ টেবিল বা সত্যক সারণী নিচে দেয়া হলোঃ
ন্যান্ড গেটঃ
অ্যান্ড গেটের আউটপুট এর সাথে একটি নট গেট সংযুক্ত করলে একটি ন্যান্ড গেট পাওয়া যায়। এর আউটপুট ইনপুটসমূহের ‘লজিক্যাল ন্যান্ড’ অপারেশনের সমান। এর প্রতীক এবং ট্রুথ টেবিল বা সত্যকসারণী নিচে দেয়া হলোঃ
এক্স-অর গেটঃ
এক্স-অর গেটের আউটপুট এর ইনপুটসমূহের ‘লজিক্যাল এক্স-অর’ অপারেশনের সমান। এর প্রতীক এবং ট্রুথ টেবিল বা সত্যক সারণী নিচে দেয়া হলোঃ
এক্স-নর গেটঃ
এক্স-নর গেটের আউটপুট এর ইনপুটসমূহের ‘লজিক্যাল এক্স নর’ অপারেশনের সমান। এর প্রতীক এবং ট্রুথ টেবিল বা সত্যক সারণী নিচে দেয়া হলোঃ
ইউনিভার্সাল গেটঃ
যে লজিক গেটের মাধ্যমে OR, AND এবং NOT এই তিনটি মৌলিক গেট বাস্তবায়ন করা যায় তাকে ইউনিভার্সাল গেট বলা হয়। NAND এবং NOR এই দুটি ইউনিভার্সাল গেট।
ইউনিভার্সাল গেট ব্যবহার করে মৌলিক গেটসমূহ সম্পাদনঃ
NAND গেট ব্যবহার করে নিচের চিত্রে OR, AND এবং NOT এই তিনটি মৌলিক গেট বাস্তবায়ন দেখানো হলোঃ