
জী
জীববিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে গেলে সবার প্রথম মাথায় কোন প্রশ্নটা আসা উচিৎ? আমি ঠিক জানি না, কারণ আমাদের সবার চিন্তা একরকম না। একেকজন মানুষ একেকভাবে চিন্তা করে। গৎবাঁধা হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে প্রথম প্রশ্ন হিসেবে বলা হবে, ‘জীবন কাকে বলে? সংজ্ঞাসহ উদাহরণ দেয়া হলো!’
কিন্তু, আমি জানি না কেন, আমার মাথায় সবার আগে এই প্রশ্নটা আসে নি। আমি ভাবছিলাম, এই প্রাণ কোত্থেকে এলো?
জীবন
বইয়ের মতো সংজ্ঞাসহ উদাহরণ না দিলেও আমাদের আলোচনার সুবিধার্থে ‘জীবন’ শব্দটা আসলেই একটু ঘেঁটে দেখা দরকার। এই শব্দটা দিয়ে আমরা আসলে কী বুঝবো? ঠিক কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে আমরা বলবো যে, এই জিনিসটার জীবন আছে?
সত্যি কথা বলতে, জীবন এতো বৈচিত্রময় এবং এতো অদ্ভুত যে, এর আসলে ধরাবাঁধা কোন সংজ্ঞা নেই। কিন্তু কোনকিছুর মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলে আমরা বলতে পারি যে, এর জীবন আছে।
১. অভিযোজন(Adaption): এর মানে হলো, পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে খাপ-খাইয়ে নেয়া। এই অভিযোজন জীবনের জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন না হলে বিবর্তনের ধারায় কেউ টিকে থাকতে পারে না। সরল কথায়, অভিযোজন না হলে জীবনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
২. প্রজনন(Reproduction): জীবন নতুন জীবন তৈরি করতে পারে। সেটা হোক যৌন বা অযৌন প্রক্রিয়ায়। বোঝাই যাচ্ছে, এটিও জীবনের টিকে থাকার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নতুন জীবন তৈরি করে উত্তরসুরি না রেখে গেলে জীবন টিকে থাকবে কেমন করে?
৩. উদ্দীপনায় সাড়া দেয়া(Response to stimuli): সরল কথায় এর মানে হলো, যে কোন কিছু হলে সেটার প্রতিক্রিয়া দেখানো। একটা উদাহরণ দিলে হয়তো একটু ভালো করে বোঝা যাবে। আমরা যেমন খাবারের গন্ধ পেলে বা খাবার আছে টের পেলে ছুটে যাই, গাছও একই কাজ করার চেষ্টা করে। গাছের খাবার হলো আলো, পানি আর বাতাস। কাজেই, গাছের পাতা সবসময় যেদিকে বেড়ে উঠলে ভালো করে সূর্যের আলো পাবে সেদিকেই বেড়ে ওঠার চেষ্টা করে। এই যে, সূর্যের আলো খুঁজে পেয়ে সেদিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করা এবং এর ফলে বেড়ে উঠতে থাকা, একেই বলে উদ্দীপনায় সাড়া দেয়া।
৪. বিপাক(Metabolism): রাসায়নিক পদার্থ থেকে শক্তি তৈরি করা, এ থেকে কোষীয় অঙ্গাণু তৈরি করা কিংবা জৈব পদার্থ(যেমন ভাত)কে পরিপাক করে সেটা থেকে শক্তি উৎপাদনের যে প্রক্রিয়া এদেরকে এক শব্দে বলে বিপাক। শক্তি ছাড়া তো জীবনের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব না, এটুকু তো বোঝাই যায়, তাই না?
৫. বৃদ্ধি(Growth): এটাও জীবনের একটা বৈশিষ্ট্য যে, জীবন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এটা জীবনের জন্য আবশ্যক না। অনেককেই আমরা দেখি যাদের বৃদ্ধি থেমে গেছে, কিন্তু দিব্যি বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে অনেক কোষ এবং কোষীয় অঙ্গানু তৈরি হয় এবং মারাও যায়। আসলে বৃদ্ধি কথাটার মানে হচ্ছে, কোষ এবং কোষীয় অঙ্গানুর এই মৃত্যুর হার থেকে সৃষ্টির হার বেশী হতে হবে। নাহলে, একটা কোষ তৈরি হতে হতে দুটো কোষ মরে গেলে কী হবে- বুঝাই তো যাচ্ছে!
৬. নির্দিষ্ট গঠণ(Organization): এককোষ হোক বা বহুকোষ- জীবনের একটা নির্দিষ্ট গঠণ থাকে সবসময়। এখানে কিন্তু মোটেও আকারের কথা বলা হচ্ছে না! দেখতে কেমন, লম্বা নাকি খাটো কিংবা গোল নাকি চারকোণা- সেটা না। একটা নির্দিষ্ট গঠন, যেমন পরিপাকের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বা খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা- এমন।
আসলে, এই বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়া জীবন টিকে থাকতেই পারবে না। এজন্যই, জীবনের একবাক্যের কোন সংজ্ঞা না থাকলেও এটুকু বলা যায় যে, জীবন হতে হলে এই বৈশিষ্ট্যগুলি থাকতে হবে। কষ্ট করে এটুকু যদি এরই মধ্যে পড়ে ফেলে থাকো, এই বেলা একটা কথা বলে ফেলা যায়। আমরা আসলে নিয়মিত বিরতিতে এসব জিনিস নিয়েই আরো খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত আলোচনা করবো। এবং এইটুকু বুঝে থাকলে দেখবে, পুরো ব্যাপারটা কী চমৎকার!
আচ্ছা, এখন আবার আমাদের সেই প্রশ্নটায় ফিরে আসি। এই যে জীবন- এর উৎপত্তি হয়েছে কোথা থেকে? এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, এই হিসেবে বলা যায়, জীবনের উৎপত্তি হয়েছে জড় পদার্থ থেকে!
ব্যাপারটা ভাবতে গেলেই কেমন যেন লাগে, তাই না?
প্রাণের উদ্ভব নিয়ে বেশ কয়েকটা মতামত আছে। যেমন, ১৯শতকের শুরুর দিকেও মানুষ ভাবতো, মাটি, আলো, বাতাস এবং পানি থেকে প্রতিনিয়ত নতুন জীবন তৈরি হয়। লুই পাস্তুর এই মতবাদটাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বাতিল করে দেন। উনি দেখিয়েছিলেন যে, কোন নতুন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ‘স্পোর’ ছাড়া জন্মাতে পারে না।
এই স্পোর আসলে এক ধরণের গঠন, এতে একটা আবরণ দিয়ে নতুন জন্মাতে যাওয়া শিশু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াটা মোড়ানো থাকে। ডিমের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই না? হ্যাঁ, ডিমের মতোই, কিন্তু এটা আসলে ডিম না। পুরো ব্যাপারটা আসলে অযৌন প্রক্রিয়ায় হয় এবং এই স্পোর জিনিসটা শিশু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে প্রায় সবরকম সমস্যা থেকে একেবারে নিরাপদ রাখে। তো, এই স্পোর ছাড়া যেহেতু নতুন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারছে না, কাজেই এই মতবাদটা বাতিল হয়ে যায়।
এর পরে এই নিয়ে ডারউইন একটা মতবাদ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন। উনি বলেছিলেন, হয়তো জীবনের শুরু হয়েছে ছোট কোন পুকুরে। ওই পুকুরে হয়তো অ্যামোনিয়া, ফসফরাসের সবধরনের লবণ এবং আলো, তাপ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি একসাথে হয়ে ছিল। এভাবেই হয়তো একটা প্রোটিন-যৌগ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে এটি আরো জটিল হতে হতে আজকের এই বহুকোষী প্রাণের উৎপত্তি হয়। উনি বলেছিলেন, সে সময়ের আবহাওয়া আর পরিবেশ তো আর এখনকার মতো ছিল না। তাই, এখন হয়তো এই প্রক্রিয়াটা অনেক দ্রুত হচ্ছে কিন্তু সেসময় প্রথমবার এই প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হতে হতেই এতো সময় লেগে গিয়েছিল।
জীবনের উৎপত্তি নিয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হল ওপারিনের মতবাদ। এ মতবাদই আসলে পুরো ব্যাপারটাকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। ওপারিনের মতে, জীব আর জড় পদার্থের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই! এবং আমরা নক্ষত্রের সন্তান!
একটু গুছিয়ে বলার চেষ্টা করা যাক।
আমাদের শরীরে হাইড্রোজেন আছে, পরমানু সংখ্যা নয়, ওজন হিসেবে, শতকরা ১০ ভাগ। অক্সিজেন আছে ৬৫%, ১৮% কার্বন, নাইট্রোজেন ৩%, আর বাকি ৪ ভাগ জুড়ে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম…ইত্যাদি। কথা হল, এগুলো আমাদের শরীরে এল কোথা থেকে? এ জন্য আমাদের একটুখানি জ্যোতির্বিজ্ঞান আর পরমানুজ্ঞান লাগবে।
পৃথিবী এবং সৌরজগতের জন্মের অনেক আগেই নক্ষত্রগুলো জন্ম হতে শুরু করেছিল। রাতের আকাশে তারাগুলো মৃদু আলোর পরশ বুলিয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু এরা আসলে আগুনের গোলা। এরা যে জ্বলজ্বল করছে এর কারণ এদের মধ্যে চলমান রাসায়নিক বিক্রিয়া।
আমারা সবাই জানি, হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে প্রোটন আছে একটি, এবং নিউক্লিয়াসের বাহিরে, কক্ষপথে ইলেক্ট্রনও আছে একটি। একইভাবে হিলিয়ামের আছে দুটি প্রোটন ও দুটি ইলেক্ট্রন। কার্বনের চারটি করে। তারাদের মাঝে যে বিক্রিয়াটা হয় সেটা একটু অন্যরকম বিক্রিয়া। একে বলে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া।
সৃষ্টির শুরুতে সবকিছুই যেহেতু সহজ সরল ছিল তাই নক্ষত্রগুলোও শুরুতে হাইড্রোজেনের অতি সরল পরমাণু দিয়ে ভর্তি ছিল। এরকম একটি হাইড্রোজেন পরমাণু অন্য একটু হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে একটু অন্য রকম একটি বিক্রিয়া করে হিলিয়াম উৎপন্ন করে। দুটি হাইড্রোজেনের প্রোটন দুটি একত্রে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ২ প্রোটন বিশিষ্ট হিলিয়াম। এ প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু শক্তিও তৈরি হয়। এই শক্তিই নক্ষত্রকে ঔজ্জ্বল্য দেয়, তাপ দেয়। এভাবে সব হাইড্রোজেন এক সময় হিলিয়াম হয়ে যায়। এবার শুরু হয় হিলিয়াম-হিলিয়াম বিক্রিয়া, ২ প্রোটন বিশিষ্ট ২ টি হিলিয়াম যুক্ত হয়ে তৈরি করে ৪ প্রোটন বিশিষ্ট কার্বন। এভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন থেকে অক্সিজেন, তারপর সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম…ইত্যাদি ভারী মৌল তৈরি হতে থাকে। এখন কথা হল, তারাদের পেট থেকে এরা পৃথিবীতে আসল কিভাবে? সুপারনোভা বিস্ফোরণের ফলে।
সুপারনোভা হল তারাদের মৃত্যুর একটি প্রক্রিয়া। এটি নির্ভর করে এদের ভরের উপর। মিলিয়ন-বিলিয়ন বছর ধরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে চলতে জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে নক্ষত্রের মৃত্যু হয়।
এখন, নক্ষত্রটার ভর যদি সূর্যের ভরের কাছাকাছি হয় তবে মহাকর্ষের আকর্ষণে এটি সংকুচিত হয়ে পৃথিবীর আকারের কাছাকাছি আকার ধারণ করে, বলা যায় বৈচিত্রহীন একটি মৃত্যু। কিন্তু এটির ভর যদি সূর্য থেকে ১.৪ গুণ বা তার বেশী হয় তখন এর মৃত্যুটি হয় বেশ চমকপ্রদ ভাবে।
নক্ষত্রটির জ্বালানী শেষ হওয়ার সাথে সাথে এটির কেন্দ্রটিও সংকুচিত হতে থাকে। জ্বালানী শেষ হয়ে আসার ফলে নক্ষত্রটিকে ধরে রাখার কিছু থাকে না, কাজেই কেন্দ্রটি হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে খুবই ছোট্ট আকার নিয়ে নেয়। আসলে পরমাণুগুলো ভেঙ্গে সমস্ত ভর নিউক্লিয়াসটিতে এসে জমা হয়। এর ফলে কেন্দ্রে যেটি তৈরি হয় একে বলা হয় নিউট্রন স্টার। মজার ব্যাপার হল, এই পুরো ব্যাপারটুকু ঘটে মাত্র দশ সেকেন্ডের মাঝে। এর ফলে নিউক্লিয়াসটির ভরের শতকরা দশ ভাগ রুপান্তরিত হয় শক্তিতে, এবং এজন্যে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এ বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্রটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে, আর এটাই হল সুপারনোভা বিস্ফোরণ। এর ফলে নক্ষত্রের ভিতরে গড়ে ওঠা পরমাণুগুলো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, লক্ষ কোটি বছর পর মহাজাগতিক ধুলিকণা এবং অন্য অনেক কিছুর সাথে মিলে হয়তো কোথাও তৈরি হয় সৌরজগত। সেই সৌরজগতে থাকে সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদি। আর সেইসব গ্রহে থাকে প্রাণ গঠিত হওয়ার উপযোগী অনু পরমাণু। এভাবেই আমাদের সৌরজগৎ এবং পৃথিবীর জন্ম হয়েছে।
এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, সেই হিসেবে পৃথিবীর জন্ম হয়েছে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে। তারপর, জীবনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং সঠিক প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হতে হতে পেরিয়ে গেছে আরো ১ বিলিয়ন বছর। তারপর, সেই অসম্ভব চমৎকার মুহুর্তটি- একটু চোখ বন্ধ করে এই লেখাটা পড়া থামিয়ে দিয়ে একটু কল্পনা করার চেষ্টা করো, প্রথমবারের মতো পৃথিবীতে একটা জীবন তৈরি হচ্ছে! জীবন!
আগেই বলেছি, জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপাদানগুলো এসেছে নক্ষত্রের মধ্য থেকে। আসলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল গঠিত হয়েছিল মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন এবং জলীয় বাস্প দিয়ে। ওপারিনের ভাষায়, এগুলিই হলো জীবন গঠনের মূল উপাদান। এই মূল উপাদানগুলো মিলে, এই ১ বিলিয়ন বছর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া উপযুক্ত পরিবেশে প্রথমবারের মতো তৈরি করেছিল এমাইনো এসিড- জীবনের প্রথম অনু! এটির মাঝে রয়েছে কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেন।
একটা কথা মনে হয় বলে নেওয়া ভাল, যে, পৃথিবীতে প্রাণের গঠণ মূলতঃ কার্বন ভিত্তিক (carbon-based)। তাই কার্বন আর হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত যেকোন যৌগকেই(এদেরকে রসায়নের ভাষায় ‘হাইড্রোকার্বন’ বলে) এক কথায় বলা হয় জৈব যৌগ। আগে ধারণা করা হত জৈব যৌগ বুঝি অলৌকিক কোন শক্তির ফলে তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জড় পদার্থ থেকে জৈব যৌগ ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়েছে। সর্ব প্রথম ফ্রেডরিখ ভোলার নামে একজন জার্মান বিজ্ঞানী অজৈব অ্যামোনিয়াম সায়ানেট থেকে জৈব যৌগ ইউরিয়া তৈরি করেন। অর্থাৎ, এটি দেখতে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, এটিই সত্য। জড় পদার্থের সঙ্গে আমাদের নাড়ীর একটা নিবিড় যোগাযোগ আছে। আরও বড় কথা, যতই অদ্ভুত শোনাক- আমরা নক্ষত্রের সন্তান। রাতের আকাশের কোন এক নক্ষত্রের বুক থেকেই আমাদের রক্ত, মাংস, হাড়- এইসব কিছু তৈরির মূল উপাদানগুলি এসেছে।
অ্যামাইনো এসিড দিয়ে জীবনের প্রথম যে অনু গঠিত হয়, তাতে কিন্তু সুগঠিত নিউক্লিয়াস ছিল না। এরপর প্রাণের বিস্তার হয়েছে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে। এই আদি কোষ থেকে প্রথম সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট এক কোষী প্রাণি, এবং এ থেকে বহুকোষী প্রাণির উদ্ভব হয়। সে অন্য গল্প, প্রাণের বিকাশের গল্প, বিবর্তনের গল্প। এই নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।