জারনমানঃ
জারনমান বলতে বুঝায় কোনো যৌগে/আয়নে কোনো একটি স্পেসিফিক প্রতি পিস পরমানু এই যৌগ/আয়ন গঠনে কতটি ইলেক্ট্রন গ্রহন/বর্জন করেছে !
বিষয়টি ব্যখ্যা করার জন্য আরো একটু বিশদ আলোচনা প্রয়োজন !
*যদি কোনো যৌগে/আয়নে কোনো একটি স্পেসিফিক পরমানু যদি ইলেক্ট্রন ত্যাগ করে, তবে তার জারন মান পজিটিভ, যদি 1টি e– ত্যাগ করে তবে, জারনমান +1, যদি 2টি e– ত্যাগ করে তবে জারন মান +2, এভাবে এগুতে থাকবে।
*আর যদি e– গ্রহন করে, তাহলে জারনমান নেগেটিভ। যদি 1টি e– গ্রহন করে, তাহলে জারনমান –1, যদি 2টি e– গ্রহন করে,তাহলে জারনমান –2, এভাবে এগুতে থাকবে।
*যদি কোনো মৌল প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় থাকে, তবে তার জারনমান শূন্য । যেমনঃ O2 প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় আছে, এবং কোনো e– দান/গ্রহন করেনি, যেহুতু e– এর বিনিময় হয়নি, তাই অক্সিজেনের অনুতে প্রতিটি অক্সিজেন পরমানুর জারনমান শূন্য।
*গ্রুপ-1 এর মৌল যেমনঃ H, Li, Na, K এরা 1টি করে e– দান করে, তাই এদের জারন মান +1।
যেমনঃ H+1 , Li+1 , Na+1 , K+1
*গ্রুপ-2 এর মৌল যেমন Be, Mg, Ba এরা 2টি e– দান করে, তাই এদের জারন মান +2।
যেমনঃ Be+2 , Mg+2 , Ba+2
*গ্রুপ-17 এর মৌল যেমন F, Cl, Br, I এরা 1টি e– গ্রহন করে, তাই এদের জারন মান –1।
যেমনঃ F-1, Cl-1, Br-1 , I-1
*নিস্ক্রিয় গ্যাসগুলোর জারনমান শূন্য । কেননা, এরা সাধারনত কারো সাথে বিক্রিয়া করে না । তাই, e– এর আদান প্রদান হয় না । তবে বিশেষ কিছু শর্তে নিস্ক্রিয় গ্যাস কিছু বিক্রিয়া দেয়, যেগুলো এখন জানার প্রয়োজন নেই!
*ত আরো একটি বিষয় স্পষ্ট, ধাতুদের জারনমান পজিটিভ,অধাতুদের জারন মান নেগেটিভ । কারন, তোমরা নিজেরা চিন্তা করে বের কর ।
*এখন আসা যাক মূল কথায়, ধরি একটি যৌগ H2SO4, ত এখানে 2 টি H, 1 টি S এবং 4 টি O আছে। এখন, আমাদের কাজ S/ সালফার এর জারন মান বের করতে হবে !
*ত পদ্ধতিটি হচ্ছে, যৌগে উপস্থিত প্রতিটি পরমানুর জারনমানের যোগফল শূন্য হবে। কারন, যৌগটির নিট চার্জ শূন্য।
অন্যভাবে বললে, e– আদান প্রদানের সংখ্যা সমান।
আমরা এতটুকু জানি, এখানে H এর জারন মান +1, তাহলে 2 টি H এর জারন মান (+1)*2= +2।
যেহুতু, আমাদের S এর জারনমান জানা নেই, তাই অজ্ঞাত এই মান নির্নয়ের জন্য গনিতের সমীকরনের মত এর মান x ধরব।
তাহলে, S এর জারন মান (1*x)= +x।
আর O এর জারন মান –2। তাহলে 4 টি O এর জারনমান (-2)*4 = -8।
এখন, পদ্ধতিমতে, সবকটি মৌলের মোট জারনমানের যোগফল শূন্য। অর্থ্যাৎ,
+2 +x -8 = 0
=> x – 6 = 0
=> x = +6
সুতরাং, সালফিউরিক এসিডে S এর জারন মান +6
জারন মান নির্ণয়ঃ
ফর্মূলা–১: যদি যৌগ চার্জনিরপেক্ষ হয়, তবে প্রতিটি পরমানুর জারনমানের যোগফল শূন্য।
কিছু উদাহরন দেখা যাক!
Q: KMnO4, এখানে Mn এর জারন মান নির্ণয় কর।
Soln: (+1) + x + (-2)*4 = 0
=> x – 7 = 0
=> x = +7 (ans:)
Q: H3PO4 এ P এর জারনমান নির্ণয় কর।
Soln: (+1)*3 + x + (-2)*4 = 0
=> x – 5 = 0
=> x = +5 (Ans:)
Q: K2Cr2O7 এ Cr এর জারনমান নির্নয় কর।
Soln: (+1)*2 + 2x +(-2)*7 = 0
=> 2x – 12 = 0
=> 2x = 12
=>x = +6 (Ans:)
ফর্মূলা–২ যদি যৌগমূলক দেওয়া থাকে, তাহলে পরমানুসমূহের জারনমানের যোগফল যৌগমূলকের চার্জের সমান।
Q: NH4+ আয়নে N এর জারন মান নির্নয় কর।
Soln: x + (+1)*4 = +1
=> x + 4 = +1
=> x = -3(Ans:)
Q: CO32- আয়নে C এর জারনমান নির্নয় কর।
Soln: x + (-2)*3 = -2
=> x – 6 = -2
=> x = +4(Ans:)
একটি স্পেশাল গানিতিক সমস্যা!যেটি তোমাদের বাড়ির কাজ!
Q: (PH4)3 PO4 যৌগে P এর জারন মান নির্নয় কর।
Soln: এখানে দুটি যৌগমূলক আছে, একটি হচ্ছে PH4+ / ফসফোনিয়াম আয়ন আর আরেকটি হচ্ছে PO43- / ফসফেট আয়ন।
এখানে আলাদা আলাদা করে ফর্মূলা ২ খাটিয়ে P এর দুটি জারন মান আসবে! -3, +5 (Ans:)
আশা করি, এটাতে আর কনফিউশন নেই!
কিছু অক্সাইড এর প্রকারভেদ আছে, যেগুলোর নামকরন উক্ত যৌগে অক্সিজেনের জারনমানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়!
১. পার অক্সাইড/Per oxide: যদি কোনো অক্সাইড যৌগে অক্সিজেনের জারন মান -1 হয়, তাহলে উক্ত অক্সাইডটি একটি পার অক্সাইড।
যেমনঃ H2O2/ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড।
এখানে, অক্সিজেনের জারন মান –1। চল দেখি!
(+1)*2 + 2x =0
=> 2x = -2
=>x = -1 (Ans:)
তোমরা চাইলে, সোডিয়াম পারঅক্সাইড/ Na2O2 এ অক্সিজেনের জারনমান বের করে দেখতে পারো।
২.সুপার অক্সাইড/Super oxide: যদি কোনো যৌগে অক্সিজেনের জারন মান –½হয়, তবে সে যৌগটিকে সুপার অক্সাইড বলা হয়। যেমনঃ KO2 / পটাশিয়াম সুপার অক্সাইড।এখানে অক্সিজেনের জারনমান বের করে দেখতে পারি!
(+1) +2x =0
=> 2x = -1
=>x = –½ (Ans:)
৩. সাধারন অক্সাইডঃ এটিতে অক্সিজেনের জারন মান স্বাভাবিকভাবেই –2 হয়। যেমনঃ Na2O, CaO, MgO ইত্যাদি। আশা করি এটি ব্যখ্যা করার প্রয়োজন নেই!
এগুলো ছাড়া অক্সিজেনের দুটি অস্বাভাবিক অক্সাইড রয়েছে। একটি OF2/Oxiygen di-flouride। আর আরেকটি হচ্ছে, O2F2/Di-oxygen di-flouride।
কেন এরা অস্বাভাবিক? ঘটনা হচ্ছে অক্সিজেন একটি তড়িৎ ঋণাত্বক মৌল। অর্থ্যাৎ, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় most of the time এটি e– গ্রহন করে/শেয়ার করে। কিন্তু কখনোই e– দান করে না! এতটুকু আমরা উপরের আলোচনা হতে জেনেছি, অক্সিজেনের জারনমান শূন্য, -2, -1, –½ হতে পারে। এখন এই উল্লেখিত দুটো যৌগে অক্সিজেনের জারনমান পজিটিভ আসবে।
মানে কি? মানে, এরা উক্ত যৌগ গঠনে e– দান করবে! এখন এটি কি করে সম্ভব? ব্যাপারটি হচ্ছে, অক্সিজেন যদি ওর থেকে ও বেশী তড়িৎঋণাত্বকতাসম্পন্ন কোনো মৌলের সাথে বিক্রিয়া করে যৌগ গঠন করে, তখন e– দান ব্যাতীত আর কোনো উপায় থাকে না! এখানে, অক্সিজেনের তুলনায় F অধিক তড়িৎ ঋণাত্বকতাবিশিষ্ট! আর F এর জারন মান –1, যেহুতু এটি Group-17 এর element!
এখন তাহলে এদের মধ্যে অক্সিজেন এর জারনমান নির্ণয় করা যাক!
OF2
x + (-1)*2 =0
=> x – 2 = 0
=>x= +2 (Ans:)
O2F2
2x +( -1)*2= 0
=>2x = 2
=> x = +1 (Ans:)
So, we are done with oxidation number!