
গ ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’একুবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষায় একটি আলোচিত সংযুক্তি। অবশ্য বিভাগটি ‘গণমাধ্যম অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা ‘ এবং ‘যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ নামেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীত হচ্ছে। আসুন পরিচিত হই ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিভাগের সাথে।
শুনতে অচেনা হলেও সেই ১৯৬২ সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স হিসেবে বিভাগটির পথচলা শুরু। তারপর দীর্ঘ ব্যবধানে রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে এখন দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সাংবাদিকতা স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে বেশকিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকতা অধ্যয়ন শুরু হয়েছে। তবে সাংবাদিকতা অধ্যয়নের বিপ্লব এই দশকের যা এখনো চলছে।
আপনি যদি সমসাময়িক সস্তা টিভি ও ইউটিউব নাটকের ভাষার খোলস থেকে বেরিয়ে এসে প্রমিত উচ্চারণ ও বানান সম্পর্কে অবগত ও সচেতন হন; সুন্দর করে নির্ভুল বানানে গুছিয়ে লেখার সামর্থ রাখেন; পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও যথেষ্ট দক্ষতা আছে বলে মনে করেন, তাহলে আপনি পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন এই বিষয়টিকে। এছাড়া, আপনাকে হতে হবে অনেক বেশি নিবেদিত, থাকতে সার্বক্ষনিক কাজ করার মানসিকতা। হতে হবে ভালো উপস্থাপক কিংবা ভালো লেখক, সর্বোপরি একজন সাহসী মানুষ। এসব গুণবলি না থাকলে অন্তত এই বিষয়ে না আসা-ই ভালো।
দুইটি অংশে ভাগ করে পড়ানো হয় বিভাগটিতে । প্রতি সিমেস্টার বা ইয়ারে ‘যোগাযোগ ‘ এবং ‘সাংবাদিকতা’ এই দুটি বিষয়ের উপরে কোর্স থাকবে। যোগাযোগ অধ্যয়ন ও সাংবাদিকতা অধ্যয়ন সবগুলো সিমেস্টারেই থাকবে। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয় শেখানো হয় প্রথম সিমেস্টারে। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজির উপরেও কোর্স থাকে। এরপর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার অনেক জটিল বিষয় পড়ানো হয়,পড়ানো হয় মিডিয়া ইকোনোমিকস, পরিসংখ্যান, সংস্কৃতি, ইতিহাস। আছে মোবাইল জার্নালিজম, ফটোগ্রাফি ও ফিল্মের উপরে কোর্স। প্রথম দিকের কোর্সগুলো সহজ হলেও পরবর্তী কোর্সগুলো শিক্ষার্থীদের অনেক ঘাম ঝরায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। এখানকার ছাত্র-শিক্ষক, সিনিয়র -জুনিয়রদের মধ্যকার সম্পর্ক অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঈর্ষার কারণ। দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এই বিভাগের শিক্ষক। ফেইসবুকে লগ-ইন করে যদি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান (তিনি আপনার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই) কিংবা পাঁচ-দশ জন বিখ্যাত সাংবাদিক-উপস্থাপককে নিজের বন্ধু তালিকায় দেখতে পান তখন কেমন অনুভূতি হবে তা বলতে হয় না। এগুলো শুধু মাত্র সাংবাদিকতা বিভাগেই সম্ভব কেননা এখানকার আবহাওয়াই এমন।
বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র হলে আপনার ভেতরে নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা, সমাজ চিন্তার মতো বেশকিছু দিক জেগে উঠবে। প্রথম বর্ষ থেকেই ফেইসবুক প্রোফাইলে রিপোর্টার শব্দটা যোগ করতে চাইলে এখন থেকে প্রস্তুতি নিন সাংবাদিকতা বিভাগে ঠাঁই পাওয়ার জন্য। কাগজ হাতে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনের নিউজ কাভার কিংবা সংঘাত চলাকালে ঝুঁকি নিয়ে মোবাইল বা ক্যামেরা হাতে দৌঁড়ানোর স্বাদ ছাত্রাবস্থায় পেতে হলে সাংবাদিকতা পরিবারে আসতে হবে। আর ছাত্রাবস্থায় এভাবে আয় করার মজাটা তো আলাদাই ! স্নাতকোত্তর বেকারত্ব জীবন এই অভাবের দেশের নিত্য চিত্র। কিন্তু সাংবাদিকতা বিভাগে পড়লে অন্তত আপনার বেকার থাকার কোনে সুযোগ নেই। দেশে কাগজি পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের সংখ্যা পর্যাপ্ত। আছে ভালো মানের অনলাইন পত্রিকা। সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসমৃদ্ধ আপনি এসব প্রতিষ্ঠানে আপনি সহজেই চাকরি পেয়ে যাবেন। দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি বিভাগটি চালু হয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। যার ফলে সিজিপিএ ভালো থাকলে এবং যোগ্যতা থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এই বিভাগটির শিক্ষক হবার বড় সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হয় , আগামী দশ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে একটানা সাংবাদিতা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ চলতে থাকবে। এছাড়া কমিউনিকেশন অফিসার এবং পাবলিক রিলেশন অফিসার হিসেবেও আপনি চাকরির সুযোগ পাবেন।
অনার্স শেষে বহির্বিশ্বে যোগাযোগ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আপনি আপনার ক্যারিয়ারকে নিয়ে যেতে পারেন উচ্চ পর্যায়ে। পরিশেষে একটা কথা, সাংবাদিকতা মানে শুধু নিউজ কভার করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে রাস্তায় মার খাওয়া নয়। সাংবাদিকতা মানে অন্যায়ের হৃৎপিণ্ডে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সত্যকে আগলে রেখে বিবেকের পথে চলা।সাংবাদিকতার জগতে আমন্ত্রণ রইলো।
আতিকুর রহমান
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।